লিখেছেনঃ TJ আফরিন
এই তোমার সমস্যা কি?
তুমি মাছটা ফিরিয়ে দিবা কিনা বলো?
তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছনা!!
মাছটা ফিরিয়ে না দিলে আজকে পচা মাছই খাওয়াবো
এরপর রান্নাঘর হতে কিছু পাতিলের ঝনঝনানি আর বড় গুণ্ডির উচ্চকণ্ঠে চিৎকার (গুণ্ডি বলছি এই কারনে যে, আমার মতে গুণ্ডার স্ত্রী লিঙ্গ গুণ্ডি হওয়া উচিত)।
পেপারটা ঠিকমত রাখনই কেন?
হায় খোদা! তুমি এটা কি পড়েছ? এই শার্টের সাথে এই টাই মানায়?
কি আশ্চর্য আওয়াজ করে খাচ্ছ কেন? এভাবে মানুষ খায়!
খায়!! আমি খাই তোমার কোন সমস্যা আছে?
নাহ্! আমি পারিনাই বলতে বড় গুণ্ডির চোখের দিকে তাকিয়ে। চোখ একখান আল্লাহ দিয়েছেন ওনাকে। মাশাআল্লাহ্, দেখে মনে হয় মনের কথা সব পড়ে ফেলতে পারবে। তাই ভয়ের চোটে মনে মনেও কোন কথা ভাবিনা।
নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন এই বড় গুণ্ডি কে? তিনি আমার বউ। বিয়ের আগে এবং পরেও তিনি তার গুণ্ডামি তার জগতের একমাত্র আমার মত নিরীহ ব্যক্তির উপর চালিয়ে আসছেন এবং থাকবেন।
তার সাথে প্রথম পরিচয়ের দিন হতেই এসব গুণ্ডামি চালিয়ে আসছেন।
একই ডিপার্টমেন্ট এ ছিলাম আমরা। শুধু ও আমার জুনিয়র ছিল। একদিন রিকশা করে যাচ্ছি কলাভবনের দিকে, কার্জন হলের গেট পার না হতেই দৌড়ে আমার রিকশায় উঠে পড়ে। আমি আর কিছু বললাম না একটা মেয়ের চলন্ত রিকশায় উঠার ক্ষমতা দেখে।
টি.এস.সি আসতেই বলে নামেন। আমি বলি কেন?
বলে কিনা, আরে ভাইয়া আমি নীলক্ষেত যাব, আমি রিকশা পাইনি তাই আপনার রিকশায় উঠলাম এখন এতটা পথ কি হেঁটে যাব! কিছুটা পথ গেলে-ইতো আপনি কলাভবন যেতে পারবেন। ঐ যে বললাম আমি নিরীহ ব্যক্তি তাই কিছু বললাম না।
তারপর একদিন দেখি ডিপার্টমেন্ট এর বাইরে তার এক বান্ধবীর সাথে জোরে জোরে নেত্রীদের মত জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছে। এটা দেখে আমি আমার বন্ধুদের বসি, এই গুণ্ডা মেয়েটা যার ঘরে যাবে সে ঘরে আগুন লাগিয়ে ছাড়বে। তার হবু বেচারা বরটার জন্য আমার মায়া হচ্ছে। কে জানতো সেটা আমিই হবো!! ভাগ্যের লিখন খণ্ডাবার নয়, তাই এই গুণ্ডি আমার ভাগে জুটছে। বিয়ের দিন আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে একচোট মজা করে নিলো।
**********************************
বড় গুণ্ডির চিৎকার চেঁচামেচিতে যখন আমার জীবন অতিষ্ঠ তখন নিজ রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গিয়ে মনের দুঃখ ভোলার জন্য ধরালাম একটা সিগারেট।
-বাপি, আমি খাবো। আমাকে দাও,আমিও মুখ দিয়ে ধোয়া বের করবো।
বলে কি মেয়ে!!!
-না মা এটা খেতে হয় না।
-তাহলে তুমি খাও কেন! তোমাকে না বলেছি কতবার এই পচা জিনিসটা খাবানা। আমি খাই না, মামণি খায় না তুমি খাও কেন?
নাহ্, এই ছোট গুণ্ডির জ্বালায় এটাও বাদ দিতে হবে। বড় গুণ্ডি এটাকে না ছাড়াতে পারলেও এই পুঁচকটা ছাড়াবে।
চিনতেতো পেরেছেন আমার ছোট গুণ্ডিটা কে?
এ আমার ছয় বছরের মেয়ে তাথৈ।
এর হাবভাবও মায়ের মতো একেবারে, জন্ম নেবার পর থেকেই।
একদিন পেপার পড়ছি কোথা থেকে উড়ে এসে এক ঝটকায় পেপারটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে ঠিক তলোয়ার বের করার ভঙ্গীতে এক ডজন পেন্সিল এনে বলে,
-বাপি এগুলো শার্প করে দাও
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
-একসাথে এতগুলো কেন?
-মামণি বলেছে, যা তোর বাপের কোন কাজ নেই শুক্রবারে, একমাসের পেনসিল শার্প করিয়ে আন।
বোঝেন অবস্থা, এদের জ্বালায় শুক্রবারেও বাসায় থাকা যাবে না।
************************************
ডিসেম্বর মাস মেয়ের পরীক্ষা শেষ তাই প্লান করে দুই গুণ্ডিকে দিলাম আমার শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে।
হুররে!!! পনের দিনের জন্য আমার রাজ্যে আমি একা। কেউ শাসন করার নেই। মনের সুখে বহু বছর পর গান গাইতে মন চাইল,
“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে”
দুপুরে অফিসে লাঞ্চ আর রাতে ফ্রিজে বড় গুণ্ডির রেখে যাওয়া রান্না করা মাংসতে দিব্যি এই-কয়দিন ভালোই চলে যাবে।
***************************************
সকালে ঘুম ভাঙল।
মনে হল কতদিন পর একটা শান্তির ঘুম ঘুমালাম।
একি আটটা বাজে!!!
কেউ আমাকে ডাকেনাই কেন!
উত্তরা থেকে বাসে করে মতিঝিল-তো দুই ঘণ্টায়ও পৌছাতে পারবনা।
পরে মনে হয়ে গেল গুন্ডিরাতো কেউ বাসায় নাই ডাকবে কে।
যাইহোক বসের ঝারি খেয়ে যখন রুমে এসে বসলাম তখন দেখি শওকত ভাই আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন মনোযোগ দিয়ে। আমি তাকিয়ে দেখি দুই পায়ে দুই মোজা।
আজকে একটা মিটিং আছে। কনফারেন্স রুমে ঢুকতে যাব এমন সময় পেছন থেকে আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী এসে আমাকে বলে, কি ভাই আপনার রুচিতো ভালোই জানতাম আজকে এটা কি টাই পড়ে আসছেন? আজকে মিটিং বলে কথা। আমিও তাকিয়ে দেখি আসলেই টাইটা এই শার্টের সাথে যায় না।
ক্লান্ত একটা দিন শেষ করে যখন বাসায় আসলাম। ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করে খেতে যাব এমন সময় মনে হল আরে কিছু একটা মিস করছি খাবারের সাথে। মনে পরে গেল আমার বউয়ের ঝাড়ি। কেউ আমার খাওয়ার ভুল ধরছেনা। খাবার না খেয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট ধরালাম, ঐ একই হল কেউ এসে বলছেনা আমিও খাবো। তাই বিরক্ত হয়ে ফেলে দিলাম।
এমন করেই নানা ভুলের আর দ্বন্দ্বের মাঝে কেটে গেল এক সপ্তাহ।
অফিস হতে রোজ বাসায় ঢুকি ঠিকই কিন্তু অক্সিজেন পাই না এই বদ্ধ চার দেয়ালের মাঝে। দু’ পরমাণু অক্সিজেনের বরই অভাব এখানে, এক পরমাণু আমার বউ আরেকজন আমার মেয়ে। তাই এই কতদিনে মনে হল আমি বোধহয় শ্বাস কষ্টের রোগী হয়ে যাচ্ছি এক অণু অক্সিজেনের অভাবে।
তাই সপ্তাহ না ঘুরতেই আমি চললাম আমার দুই গুণ্ডিকে নিয়ে আসতে আমার গুণ্ডা-পাড়ায় এই নিরীহ মানুষটার উপর তাদের গুণ্ডামি চালানোর জন্য ।
রিকশা দিয়ে যাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি,
“অক্ষয় হোক তাদের গুণ্ডামি আজীবন এই নিরীহ মানুষটার উপর বেঁচে থাকার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য”
গল্প ভালো লাগলে Comment করে লেখিকাকে উৎসাহ দিন লেখা চালিয়ে যেতে।। ধন্যবাদ।।
অনেক ভাল লিখেছেন, ধন্যবাদ।