। অসমাপ্ত এস এম এস ।।
আজ সারাটা দিন ক্লাশে মন বসেনি রাত্রির। কখনো এতটা অমনোযোগী থাকেনা সে। নাসরীন ম্যাডাম তো
বার বার পড়া ধরতে লাগলেন…প্রথম দু একবার কোন মতে পেরে গেলেও শেষবার না পারায় তাকে এনে
বসিয়েছেন সবার সামনে!
মেজাজ তখন তার চরমে!
ক্রমাগত বাজতে থাকা ফোনটার দিকে চেয়ে থাকল কয়েক মুহুর্ত!
অপূর্বর ফোন…৫৯তম বারের মত বেজে চলেছে!!
একটু আগের মেসেজটা দেখে খুব রাগ হচ্ছে…কোন কথা তো শুনবেই না…আবার লিখেছে…”রাগ কর
না…আর এমন করবনা…আমি তোমাকে…”
মেসেজটা পুরোটা শেষও করেনি!!কি অদ্ভুত কাজ!!
লো ব্যাটারী দেখাতে দেখাতে বন্ধ হয়ে গেল ফোনটা!!
ফোনটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কয়েকটা মুহুর্ত…হঠাৎ মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় তার…এতটা
অভিমান না করলেও মনে হয় চলত!
জানলা দিয়ে বাইরে তাকায় অপূর্ব…বাইরের জনপথ আর মানুষগুলো যেন প্রবল বেগে পেছনে ছুটে
চলেছে…হানিফ পরিবহনের বাসটা উন্মাতাল বেগে ধেয়ে চলেছে সিলেটের দিকে।আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে
ইনশাল্লাহ পৌছে যাবে ও।
রাত্রির জন্মদিনের অর্ধেকটা এভাবে রাস্তায় কাটিয়ে দেয়াটা একদমই ঠিক হয়নি…মনে মনে অনুতপ্ত হয়
অপূর্ব।
কিন্তু সন্ধানীর কনফারেন্সটাও মিস করতে ইচ্ছা করছিল না।সেই বগুড়া মেডিকেলে…তিন দিনের কনফারেন্স
শেষে সবাই গত রাতের বাসেই সিলেট চলে গেছে…বাবা-মাকে একবার দেখে যাবার ইচ্ছায় বাসায় গিয়ে
আর রাতে যেতে মন চাইল না, তাই ক্লাশ আরো একদিন বেশী ফাঁকি দিয়ে দেরী করেই যাচ্ছে অপূর্ব।
রাত্রির জন্মদিনের কথাটাও ওর মনে ছিল…রাতে ফিরতে সেও নিষেধ করছিল…সকালে সোহাগের বাসে চলে
আসতে বলেছিল…কিন্তু দম বন্ধ বন্ধ লাগে বলে সে ভলভোতে চড়ে না।
তাই চড়ে বসল হানিফের বাসে…দ্রুত পৌছে যাবার আশায়…
কিন্তু রাত্রি যেই জানল এই বাসে উঠেছে ও…সেই যে ফোনটা কেটে দিয়েছে…আর ফোন ধরছে না!!!
ইনিয়ে বিনিয়ে ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না… টাইপ একটা এস এম এস লেখার চেষ্টা করছে অপূর্ব। কিন্তু
কথাগুলো গুছিয়ে আনতে পারছিল না…আনমনে বাইরে তাকায়…দূরে অনেক দূরে পাহাড়ের গায়ে মেঘের
আনাগোনা চোখে পড়ে…কাছ থেকে দেখতে না জানি কত সুন্দরই না লাগত!!
হঠাৎ ওর দৃষ্টিপথে বাধা হয়ে দাড়ায় বিশাল এক চলন্ত ট্রাক। বাস ড্রাইভার বেশ অনেকক্ষন থেকেই তাকে
ওভারটেক করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।কি দরকার এরকম করার!!
আবার ও এস এম এস লেখায় মন দেয়।বাসটা এবারও ট্রাকটাকে ওভারটেক করতে পারে না।সামনের দুজন
যাত্রী বাস ড্রাইভারকে এসব করতে নিষেধ করে।
রাত্রি হয়ত এখন লেকচারে।আর কিছুক্ষন পর ওয়ার্ডে ক্লাসে যাবার কথা।এস এম এসের রিপ্লাইর অপেক্ষায়
থাকে ও।আসে না… আবার আরেকটা এস এম এস লিখতে শুরু করে…
হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে অপূর্বর।মায়ের ফোন।আর কতটা সময় লাগবে জানতে চাইলেন…”আর ঘন্টা
দেড়েক, মা।আমি পৌছেই ফোন দেব।” বলে অপূর্ব।
বাসটা আবার ট্রাকটাকে ওভারটেকের চেষ্টা করছে!প্রায় অর্ধেকটা চলে এসেছে। ঠিক এমন সময় তীব্র একটা
শব্দ হয় ব্রেক কষার…মুহুর্তেই অনেকগুলো ঘটনা ঘটে যায়!
দুটো বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হানিফ পরিবহনের বাসটার অর্ধেকটা যেন দুমড়ে মুচড়ে একাকার!
চারদিক থেকে ছুটে আসতে থাকে মানুষ।
ট্রাকটা স্কিড করে পোড়া টায়ারের গন্ধ ছড়াতে থাকে।
মানুষের হৈ হুল্লোড়ে আর আহতদের চিৎকারের ফাঁকে পালিয়ে যায় বাসের ২ ড্রাইভার।
একজন একজন করে বাস থেকে মানুষগুলোকে উদ্ধার করা হচ্ছে।ছোট্ট একটা শিশুর নিথর দেহ বুকে নেমে
আসে হাত ভেঙে যাওয়া রক্তাক্ত এক মহিলা।
হাতে শক্ত করে ফোনটা ধরে রাখা একটা ছেলের নিথর দেহ বের করে আনে দুজন লোক।পকেটে মানিব্যাগে
আই ডি কার্ডটা পাওয়া যায়। লাশটা একটা কাপড়ের ওপর রাখে লোকগুলো। হাত থেকে মোবাইল ফোনটা
বের করে নেয় একজন!
একটা অসমাপ্ত মেসেজ দেখা যায় রক্তাক্ত স্ক্রিনে…কয়েকটা কথা শুধু পড়া যাচ্ছে…”রাগ কর না…আর এমন
করবনা…আমি তোমাকে…”
ভাল করে দেখতে গিয়ে সেন্ড বাটনে চাপ পড়ে যাওয়ায় মেসেজটা সেন্ড হয়ে যায়।
লোকটা এরপর সে নাম্বারে ফোন করতে থাকে…এই ছেলের কোন কাছের মানুষ হয়ত হবে ভেবে…একটা
রিং হবার পর সে কেটে দেয় হঠাৎ! কিভাবে এমন কষ্টের একটা খবর একজন স্বজনহারা মানুষকে সে
দেবে!!
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয় কিছুক্ষন…এরপর আবার ফোন করতে থাকে…রিং হতে থাকে…একবার…দুবার…করে
করে একসময় কেটে যায়…লোকটা আবার চেষ্টা করতে থাকে….ফোন বাজতেই থাকে বাজতেই থাকে…কিছু
সময় বিরাম দিয়ে আবার করতে থাকে….একসময় ভেসে আসে…আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এখন বন্ধ
আছে…
লিখেছেন-আহমেদ মেজবাহ অপু
জটিল। আসলেই অসমাপ্ত রয়ে গেল। খুবই ভাল লাগল সিগমেন্টটি।