Latest posts by kayess (see all)
- চাঁদের বয়স কত - 20/06/2015
- বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে ভয়ঙ্কর দ্বীপ - 20/06/2015
- সংসদে বসে ‘পর্নো ক্লিপিংস’ দেখে বহিষ্কৃত - 20/06/2015
১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে আইবিএম ১৬২০ কম্পিউটারটি স্থাপিত করা হয়।তবে সেটি মোটেও বাংলাদেশে স্থাপন করা কথা ছিল না। আইবিএমের ১৬২০ কম্পিউটারটি আসলো তৎকালীন পাকিস্তানে নেয়া হয়েছিল।কিন্তু কিভাবে এই কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয় তা কারো জানা ছিল না। তখন খোঁজ মিললো মো. হানিফউদ্দিন মিয়া। তিনি এই কম্পিউটারের ব্যবহার জানেন। কেননা অ্যানালগ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বিষয়ে ট্রেনিং করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে এই কম্পিউটারের ব্যবহারের আহবান জানানো হলো তাকে। বলা হলো, সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।
কিন্তু রাজি হলেন না হানিফউদ্দিন। নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না তিনি। কি আর করা! অবশেষে ঢাঁউস সাইজের কম্পিউটারটি গেলো ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনে। হানিফউদ্দিনের হাতেই শুরু হলো সেটার ব্যবহার।
এই হলো দেশের প্রথম কম্পিউটার ও কম্পিউটার অপারেটরের পেছনের গল্প।
হানিফউদ্দিনের জন্যই বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার এসেছিলো। দেশের প্রথম এই কম্পিউটার চালককে জাতীয়ভাবে সম্মাননা জানাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এবং সরকারের আইসিটি বিভাগ।
এবারের আইসিটি এক্সপোতে ১৭ জুন হানিফউদ্দিনের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে সম্মাননা স্মারকসহ বিশেষ পুরস্কার।
হানিফউদ্দিনের বাড়ি নাটোরের শিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামে। ১৯২৯ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা মানুষটি মারা যান ২০০৭ সালের ১১ মার্চ।
কথা হয় হানিফউদ্দিন মিয়ার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. শরীফ হাসানের সঙ্গে। বলেন, বাবাকে আমরা সেসময় যেমন দেখেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি আবিস্কার করেছি তিনি মারা যাওয়ার পর। গ্রামে তাকে দাফন করার পর দেখেছি মানুষ তাকে কতোটা সম্মান করতেন।
স্মৃতিচারণ করছিলেন তিনি, যখন প্রথম কম্পিউটার এদেশে এসেছে তখন আমরা অনেক ছোট। আমরা নিজেরাও সেই কম্পিউটারে অনেক সময় কাটাকাটি খেলতাম।
বাবা সম্পর্কে ছেলে শরীফ হাসানের বক্তব্য: বাবা গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তিনি গণিতে গোল্ড মেডেলও পেয়েছেন। বাবাকে সবসময় আমরা পড়াশোনা নিয়েই থাকতে দেখেছি। তাকে সম্মান জানানো হচ্ছে দেখে আমাদেরও অনেক ভালো লাগছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশে টেলিভিশনের ৫০ বছর যেভাবে আয়োজন করা হয়েছে, বাংলাদেশে কম্পিউটারের আগমনের ৫০ বছর কিন্তু সেভাবে পালন করা হয়নি। অনেকে জানতেনই না।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কম্পিউটারের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এবার তারা চাইছেন দেশের প্রথম কম্পিউটার অপারেটরকে খানিকটা সম্মান জানাতে। এর মাধ্যমে অনেকে হানিফউদ্দিন মিয়াকেও জানতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।
‘বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার চালককে জানা মানেই একটা ইতিহাস চোখের সামনে চলে আসা,’ এভাবেই সম্মাননা উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন বাংলাদেশে আইসিটির এক পথিকৃৎ মোস্তফা জব্বার।
তিনি বলেন: আমরা আর কিছু করতে না পারি সেই প্রথম বাংলাদেশি মানুষটি যিনি কম্পিউটারে হাত রেখেছেন তাকে সম্মান তো জানাতে পারি, তার কথা লিখতে পারি, বলতে পারি। তিনি দেশ ছেড়ে গেলেন না বলেই তো আমরা এখন গর্ব করতে পারছি।
‘তাকে সম্মানিত করলে দেশের তরুণ সমাজ আরো বেশি কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে,’ এমনটাই বলছিলেন মোস্তফা জব্বার।