ছবি তোলার ব্যাপারে আপনাকে সবাই পাগল বলে অভিহিত। যেখানে যান না কেন সঙ্গে থাকে ক্যামেরা। সারাক্ষণ ক্যামেরা আর ফটোএডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে বসে আছেন। তোলা আর এডিট শেষ হওয়া মাত্রই সেগুলো আপলোড করছেন ফ্লিকার বা অন্য কোন অনলাইন ফটো শেয়ার সাইটে। ছবি তোলার জন্য যেমন প্রয়োজন ভালো একটা ক্যামেরা, ঠিক তেমনি ফটো এডিটিং এর জন্য প্রয়োজন একটি দক্ষ কম্পিউটার।
আপনি আপনার পিসি সিস্টেমটি নিজে নিজে তৈরি করুন অথবা বিল্ট অবস্থায় কিনুন স্থিরচিত্রগ্রাহক হিসেবে ক্রয়ের আগে কয়েকটি বিষয় আপনার মাথায় রাখা উচিত, ভালো মানের স্টোরেজ, দক্ষ সিপিইউ এবং গ্রাফিক্স এবং অত্যন্ত উঁচু মানের একটি ডিসপ্লে।
মনে রাখবেন যে ধরণের ক্যামেরা ব্যবহার করুন না কেন ছবি এডিট এবং সংরক্ষণের জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি এইডিআর, নয়েজ রিডাকশন জাতিয় ইফেক্টগুলো নিয়ে বেশি কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। আর আপনি যদি ক্যামেরার ‘র’ ফরম্যাট নিয়ে কাজ করেন (১২ মেগাপিক্সেলের বেশি) তাহলে এক্ষেত্রে প্রচুর মেমরি এবং ভালো মানের আইপিএস মনিটর প্রয়োজন পরবে।
সিপিইউ এবং মেমরি:
সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কোর-আই সেভেন সিরিজের কোন প্রসেসর পছন্দ করতে পারেন। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে কোর আই সেভেনের মূল্য ২৭ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়েছে। পাবেন ইন্টেলের তৃতীয় প্রজন্মের আইভি ব্রিজ প্রসেসর। ৮ মেগা বাইট ক্যাসে ৪ কোর বিশিষ্ট হওয়ায় আপনার কম্পিউটারটির হয়ে উঠবে দক্ষ। প্রসেসরের পাশাপাশি মাদারবোর্ডটিও অত্যন্ত জরুরী একটা বিষয়। এক্ষেত্রে গিগাবাইট অথবা আসুসের উচ্চ মানের মাদারবোর্ডগুলো পছন্দ করতে পারেন অথবা ইন্টেলের মাদারবোর্ড ক্রয় করতে পারেন। তবে বায়োস্টার জাতীয় মাদারবোর্ড থেকে দূরে থাকবেন।
এরপর আসলো র্যাম। কোর-আই সেভেন র্যাম এর গতি ১৬০০ মেগাহার্জ পর্যন্ত সমর্থন করে থাকে। অতএব একই গতির র্যাম কিনতে পারেন আপনি। ১৬০০ মেগাহার্জের ট্র্যান্সেন্ড র্যামের দাম বাংলাদেশে ১৯০০ টাকার মত (৪ গিগাবাইট) । আমার হিসেবে ১৬ গিগাবাইট র্যাম আপনার সিস্টেমের জন্য আদর্শ। ইচ্ছা করলে আপনি এর কমও ব্যবহার করতে পারেন তবে ৮ গিগাবাইটের নিচে না নামাই শ্রেয়। মনে রাখবেন ক্যামেরার ‘র’ ফাইল নিয়ে যদি করতে চান তাহলে ১৬ গিগাবাইটের নিচে মেমরি না ব্যবহার করাই ভালো।
স্টোরেজ:
ক্যানন অথবা নিকনের ডিএসএলআরগুলো যদি আপনি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ১২ মেগাপিক্সেল ‘র’ ছবি প্রায় ১০ মেগাবাইট স্থান গ্রহণ করবে আর ১২-বিট অথবা ১৬-বিট হলে ১৪ থেকে ১৬ মেগাবাইট স্থান জুড়ে থাকবে। আর আপনি যদি অনবরত ছবি তুলে থাকেন তাহলে বিশাল আকারের স্টোরেজ থাকা যে জরুরী সেটা বুঝতেই পারছেন।
বেশির ক্যামেরায় ছবি সংরক্ষণের জন্য ফ্ল্যাশ মেমরি কার্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তির অত্যধিক উন্নয়নের কারণে বর্তমানে স্বল্প মূল্যে উচ্চ গতির মেমরি কার্ড পাবেন বাজারে। সর্বোচ্চ গতির কম্প্যাক্টফ্ল্যাশ কার্ড প্রায় ১২০ মেগাবাইট গতিতে তথ্য স্থানান্তর করতে সক্ষম। আর সর্বোচ্চ গতির এসডি কার্ড পারে ৯৫ মেগাবাইট গতিতে।
তবে কার্ডের গতির চাইতে সবচেয়ে জরুরী যেটি সেটি হচ্ছে কার্ড থেকে পিসি ট্র্যান্সফার রেটটি। আপনার ৩২ গিগাবাইট ফ্ল্যাশ মেমরি কার্ড ভর্তি যখন ৩৫০ ৪৫ মেগাবাইট আকৃতির ছবি যখন ট্রান্সফার করার সিদ্ধান্ত নিবেন তখন ইউএসবি ২.০ আপনার জন্য যন্ত্রণাদায়ক বলে মনে হবে। আর তাই এক্ষেত্রে ইউএসবি ৩.০ অথবা থান্ডারবার্ড ইন্টারফেস সমৃদ্ধ কার্ড রিডার সংগ্রহ করুন।
হার্ড ডিস্ক:
ছবি তোলার ব্যাপারে আপনি যদি আন্তরিক হয়ে থাকেন তাহলে এই ক্ষেত্রে আপনি কোন ফাঁকি দিতে পারবেন না। ছবি সংরক্ষণের জন্য ২ টেরাবাইট আকৃতির ৭২০০ আরপিএম গতির হার্ড ড্রাইভ ক্রয় করতে পারেন। তবে যত ভালো হার্ড ড্রাইভ ক্রয় করেন না কেন এটি যে কোন সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর নষ্ট হওয়া মানের হারিয়ে ফেললেন সব ছবি। ফিল্ম ক্যামেরার সময় এ ধরণের ঘটনা ঘটলে ব্যাকআপ হিসেবে থাকতো ফিল্ম, কিন্তু এই ডিজিটাল যুগে হার্ড ড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে সব গেলো। অতএব এক্ষেত্রে রেইড সুবিধা গ্রহণ করুন অথবা একটি ন্যাস ক্রয় করে নিয়মিত ছবি ব্যাকআপ করুন। দয়া করে মোবাইল হার্ড ড্রাইভকে ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহার করবেন না এগুলো আরো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
ক্লাউড:
অনেকেই এই সেবাটিকে ব্যবহার করে থাকেন। আপনিও ইচ্ছা করলে করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের ইন্টারনেট গতি এবং এই সেবাগুলোর মূল্য বিবেচনা করলে সেবাটি ঠিক উপযুক্ত নয় বলে মনে হয়েছে।
গ্রাফিক্স কার্ড:
আধুনিক ওএসগুলো বর্তমানে জিপিইউ শক্তি নানাভাবে ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে ফটো এবং ভিডিও এডিটরগুলো তাদের কার্যক্রমগুলো সিপিইউ এবং জিপিইউ এর মধ্যে ভাগাভাগি করে সম্পাদন করে। এই ধরণের অ্যাপগুলো ওপেনজিএল এবং ওপেনসিএল ব্যবহার করে থাকে।
ওপেনজিএল গ্রাফিক্সকে নির্দিষ্ট করে আর ওপেনসিএল ব্যবহার করে ডেভেলপারেরা জিপিইউকে সাধারণ কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকে। ছবি এডিটের জনপ্রিয় সফটওয়্যার ফটোশপ সিএস ৬ ওপেনজিএল এবং ওপেনসিএল উভয় সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে, আর কোরেল আফটারশট প্রো গ্রাফিক্স কার্ডকে ফাইল-ফরম্যাট কনভার্ট কাজে ব্যবহার করে থাকে। চীনের প্রোগ্রামাররা মিউজম্যাগ নামক একটি ফটো-এডিটিং সফটওয়্যার তৈরি করেছে যা সম্পূর্ণভাবে জিপিইউ অ্যাকসিলারেশনের উপর নির্ভর করে।
তবে ভয় পাবার কোন দরকার নেই, এর জন্য আপনার ৫০-৬০ হাজার টাকা মূল্যের গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন নেই। মধ্যম মানের ১৪~১৫ হাজার টাকার গ্রাফিক্স কার্ড হলেই চলবে। তবে এনভিডিয়ার কার্ডগুলোতেও কাজ হবে। তবে এ মুহূর্তে এএমডি তার কার্ডগুলোর জন্য ওপেনসিএল সুবিধাটি যুক্ত করেছে বলে ফটোশপ এর প্রোগ্রামগুলো এই গ্রাফিক্সে ভালো পারফরমেন্স দিচ্ছে। তবে সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে এনভিডিয়া যে এই সুবিধা অদূর ভবিষ্যতে যুক্ত করবে না তা বলা মনে হয় ঠিক হবে না।
ডিসপ্লে:
কালার ক্যালিবারেশন করতে সক্ষম এমন একটা মনিটর ক্রয় করাটা আপনার জন্য অবশ্য কর্তব্য। এক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মের মধ্যে আইপিএস অথবা আইপিএস ভিত্তিক এলসিডি, ৮-বিট রঙ দেখাতে সক্ষম এবং ১৯২০x১২০০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন এর ২৪” স্ক্রিন হলে সবচেয়ে ভালো হয়। দুঃখের বিষয় ২৪” ভালো মানের এলসিডি ঢাকাতে খুব একটা দেখা যায় না এবং দামও অনেক বেশি। বিশ্ববাজারে ডেল এর ২৪” মনিটরগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া এনইসি এবং স্যামসাং এর প্রফেশনাল গ্রেডের মনিটরগুলোও ফটোগ্রাফারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
ফটো এডিটরগুলো হচ্ছে ক্যামেরার মত ছবি তোলা এবং উপস্থাপনের একটি টুল মাত্র। সত্যিকার অর্থে আপনার কলা-কুশলতার উপর নির্ভর করবে আপনার ছবির মান। তবে যত ছবি তুলবেন এবং এডিট করবেন তত আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর এক্ষেত্রে সঠিক পিসি এবং সফটওয়্যার আপনাকে একদিনে সেরা চিত্রগ্রাহক হিসেবে তৈরি না করলেও আপনার জীবনকে খানিকটা সহজ করে দিবে এটুকু নিশ্চয়তা দেয়া যেতে পারে।