একাত্তর নিয়ে আমার গর্বের শেষ নাই । প্রতিদিনই নতুন কিছু জানছি ।একদিন ঐ কচি কচি হাত গুলোতে গর্জে উঠেছিলো স্টেনগান । ঐ তরুণ বুক গুলো বুলেটের পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলো । ওদের সত্যগুলো গল্পের মতো শুনে যাই । কখন গল্প শেষ হয় , বুঝতে পারিনা । চোখের পানি গাল বেয়ে পরলে ঘোর ভাঙ্গে ……
সেদিনের সেই কচি কচি হাতগুলোর চামড়া আজ ঝুলে পরেছে । বুলেট থামিয়ে দেয়া বুক গুলো আজ নুয়ে পরেছে বয়সের ভারে । ওদের পাশে বসেথাকি । পরম মমতায় ওদের হাত গুলো ছুয়ে দিয়ে বলি , পথিক , এবার আমাদেরবইতে দাও এই গুরুভার । ছুয়ে দাও যাতে কখনো হেরে না যাই । অসাধ্য সাধনের সেই মন্ত্রটা বলে দাও পথিক ।
পথিক হাসে । মুঠোভরা মাটি হাতে গুজে দিয়ে বলে , দিলাম তোমায় অমূল্য রতনখানি । যতনে রাখিও । অসাধ্যের সাধ্য নাই তোমাকে বধ করার যতক্ষণ এ মুঠো ভরা অমৃত তোমার কপালে রাজটীকা হয়ে থাকবে । পথ চলা শুরু করো নবীন । সামনে তোমার অনেকখানি পথ ।।
বয়সের ভারে নুয়ে পরা ঐ বিজয়ী বীরের পাশে তবুও বসে থাকি । অভয় পেলেও অচেনার পথে পা ফেলতে ভয় হয় । বারবার মৃত্যুর ভয় গ্রাস করে ফেলে । নতুন করে সাহস সঞ্চার করি । বৃদ্ধ পথিকের হাতে এক টুকরো লাল সবুজ গুজে দিয়ে বেড়িয়ে আসি কুটির থেকে ।
রাত তখন অনেক । আকাশের রুপালী চাঁদটার বুকে কালো কালো ছোপ । ঠিক যেন ঐ ক্যাম্পের পরোটা গুলোর মত । রুমী ভাই খুটে খুটে খেতেন । সাথে ঘোড়ার ডাল । দুর থেকে ক্যামন একটা যান্ত্রিক আওয়াজ ভেসে আসে কানে । ও দিকে হিন্দু পল্লী । পা বাড়াই ব্রীজটার দিকে । ছোটো ছোটো কালো মেঘ । দেখতে কেমন বিমানের মত দেখায় । আচ্ছা টি ৩৩ কি দেখতে এমনি ছিলো ? একাত্তর নিয়ে বেশী কিছু জানি না । কেনো জানি এখন ভুলে যাচ্ছি ওসব ।
গুরুদাসীকে দেখতে গিয়েছিলাম । ক্যামন মায়াকাড়া সুন্দর মুখ হয়েছিলো মায়ের । বেশিক্ষণ দেখতে পারি নি । ওরা আমাদের গুরুদাসীদের দিয়ে গেছে । ওদের আজও কিছু দিতে পারলাম না । ওদের এই ঋণ শোধ করব একদিন ।
হাটতে হাটতে কতক্ষণ হেটেছি মনে নেই । ক্যামন বেশরমের মত মাঝরাতে ঝুলে আছে মেয়েটা । থমকে দাড়াই । বলি এই মেয়ে , বটগাছে ঝুলে আছো কেনো ! মেয়ে নিশ্চুপ । হঠাত্ ভয় পেয়ে যাই আমি । দু পা পিছিয়ে আসি । আরে এ যে আমার বোন ! বলি , ফেনালী , লক্ষী বোন আমার , আর ঝুলিস না । নেমে আয় । খিলখিল করে হেসে ওঠে সে । আর দাড়াই না । আবার হাটতে থাকি । পেছন থেকে ফেনালী বলতে থাকে , দাদা দেখে যা , ওরা কি করেছে । ওরা বদলে গেছে দাদা । দেখে যা….
থামি না । দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাই । ঐ তো আলো দেখা যাচ্ছে । আরো দ্রুত হাটতে থাকি । ঐ তো । আরে ঐ তো ।
হঠাত্ কারা জানি পথ আগলে দাড়ায় । অচেনা কারা জানি পথে কাটা বিছানো শুরু করছে । হঠাত্ ওরা আমাকে চিনে ফেলেছে । হঠাত্ ওরা জেনে ফেলেছে আমি একসাথে থাকলে ওরা কিছু করতে পারবে না । হঠাত্ ওরা আমাকে ছিন্ন ভিন্ন করে ধ্বংস করার বুদ্ধি এটেছে । দুর হতে সেই বৃদ্ধ পথিকের আর্তনাদ শুনি । মৃত হরিদাসীর বিলাপ শুনি । ফেনালীর খিলখিলানী হাসির শব্দটাও হঠাত্ থেমে যায় । ওরা বুঝে গেছে এবারে ঘোর বিপদ । একাত্তর থেকেও ঘোর দুর্যোগ । নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে এবার আমাকে । ওরা শুধু নিঃশব্দে কাঁধে হাত রেখে দাড়িয়েছে পেছনে ।
মুঠোয় থাকা মাটিটা মাথায় লাখিয়ে নিই আমি । কাঁদা মেখে নিই সারা শরীরে । রুমী ভাইয়ের মরচে ধরা থ্রি নট থ্রি টা নামিয়ে আনি কাঁধ থেকে । সংখ্যায় ওরা সহস্র । মাঝরাতের চাঁদের আলোয় ওদের সামনে আমি একা দাড়িয়ে । মুহুর্তের নিস্তবদ্ধতায় মনে চিন্তা করে নিই , রাতটুকু যেভাবেই হোক পার করবোই । কাল সকালের সূর্য ওঠা পর্যন্ত যদি ওদের থামিয়ে রাখতে পারি , তবে আর ভয় নেই । হুংকার দিয়ে ছুটে আসে ওরা অচেনা ভাষার তুবরি ছুটিয়ে………
বহুদুর থেকে বৃদ্ধ পথিক শুনতে পায় , লক্ষ কন্ঠের কোলাহল ছাপিয়ে পরিচিত একটা কন্ঠে অনুরণিত হচ্ছে ‘ জয় বাংলা ‘ ।।
Bd2013 ভাই সঠিক বিভাগ নির্বাচন করে পোস্ট করুন । ধন্যবাদ ।
সহমত