সময়ের সাথে বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রা। এক সময়ে যা ছিল কল্পনা, এখন তা সত্যি হতে শুরু করেছে। আমাদের জীবন ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। এখন কম সময়ে কত দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারা সম্ভব সেই প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিনিয়ত আসছে নিত্যনতুন প্রযুক্তিসেবা। মোবাইল ব্যাংকিং তেমনি একটি নতুন সেবা।
বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিতে শুরু করেছে কয়েকটি ব্যাংক। পূর্ণাঙ্গ মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে অনুমতি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম এই কার্যক্রম শুরু করেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক দেশের দুই মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক ও সিটিসেলের সহযোগিতায় এই মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বছরের ৩১ মার্চ নয়াপল্টনে বাংলালিংক পয়েন্ট থেকে টাকা জমা এবং পুরানা পল্টনে সিটিসেলের পয়েন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
মোবাইল ব্যাংকিং
এটি ব্যাংকিং সেবার বিশেষ পদ্ধতি, যেখানে নগদ অর্থ উত্তোলন ও জমাদান; বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও উপযোগ সেবার বিল পরিশোধ; বেতন উত্তোলন; প্রবাসী আয় প্রেরণ ও গ্রহণ; সরকারি ভাতা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে শাখাবিহীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে দক্ষতার সাথে আর্থিক সেবা পৌঁছে যাবে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে। এটি সুবিধাজনক, সহজলভ্য ও নিরাপদ। দেশব্যাপী যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে সেবার নিশ্চয়তা রয়েছে। এর মাধ্যমে দ্রুত ও কম খরচে টাকা লেনদেন এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবায় প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে একজন গ্রাহক মোবাইল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
ব্যাংকিং প্রক্রিয়া
মোবাইল ফোন থাকলেই এখন থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন বাংলাদেশের যে কেউ, দেশের যেকোনো স্থান থেকে। তাকে ব্যাংকের শাখায় যেতে হবে না। কল রিচার্জ বা ফ্লেক্সিলোড করেন যারা তারাই অ্যাকাউন্ট খুলে দেবেন, আর ব্যাংকের হয়ে তারাই টাকা-পয়সা লেনদেন করবেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল ফোন নম্বরটি হবে অ্যাকাউন্ট নম্বর। ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত যেকোনো এজেন্ট পয়েন্টে মোবাইল অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি ইতোমধ্যে দেশজুড়ে এজেন্ট মনোনয়ন দিয়েছে; যারা ব্যাংকের এজেন্ট, সনদ ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যানার প্রদর্শন করতে পারবে তারাই ব্যাংকের গ্রাহক রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। যেকোনো মোবাইল অপারেটরের মোবাইল ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট কোম্পানির মনোনীত এজেন্ট পয়েন্টে তার মোবাইল রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশনের জন্য কেওয়াইসি ফরম, গ্রাহকের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অন্য যেকোনো ছবিসংবলিত গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে। ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোন নম্বরটিই হচ্ছে তার মোবাইল অ্যাকাউন্ট নম্বর। যার সাথে একটি চেক ডিজিট যুক্ত হবে। অন্য কেউ যাতে অ্যাকাউন্টধারীর মোবাইল অ্যাকাউন্টে অনাকাঙ্ক্ষিত টাকা জমা দিতে না পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা। মোবাইল অ্যাকাউন্টের যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল অ্যাকাউন্ট গ্রাহকেরা এজেন্টের কাছ থেকে টাকা জমা দেয়া এবং তোলার সুবিধা লাভ করবেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সাথে সাথেই টাকা জমা দেয়া যাবে। তবে অ্যাকাউন্টটি সম্পূর্ণভাবে নিবন্ধিত হওয়ার পর টাকা তোলা যাবে।
নিরাপত্তা
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে ব্যাংকগুলো। এতে যোগাযোগের জন্য যে ধরনের সর্বাধুনিক কারিগরি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম অনেকটা নিরাপদে করা সম্ভব। ব্যাংক মনোনীত যেকোনো এজেন্ট ও ব্যাংকের শাখায় টাকা জমা দেয়া যায় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায়। টাকা জমা দেয়ার পর গ্রাহক ব্যাংকের কাছ থেকে একটি জমা রসিদ পাবেন। নিরাপত্তা ও সঠিক লেনদেনের জন্য গ্রাহক এসএমএস প্রেরকের নম্বর ও টাকার পরিমাণ নিরীক্ষা করবেন। ব্যাংক মনোনীত যেকোনো এজেন্ট এবং ব্যাংকের এটিএম শাখাসহ সকল শাখা থেকে টাকা তোলা যাবে।
মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা
দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে এ বছরের ৩১ মার্চ। মোবাইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে একজন গ্রাহক যেকোনো জায়গায় টাকা জমা, উত্তোলন, কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বেতনভাতা বিতরণ, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আহরণ, সরকারি অনুদানপ্রাপ্তি, মোবাইলে তাৎক্ষণিক ব্যালান্স রিচার্জসহ বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। বর্তমানে একজন গ্রাহক এক দিনে সর্বোচ্চ পাঁচবার টাকা জমা দিতে ও উঠাতে পারেন। আর এক মাসে সর্বোচ্চ ২০ বার জমা দেয়া বা উঠানো যায়। যেকোনো জায়গা থেকে টাকা পাঠাতে জমাকৃত টাকার ১ শতাংশ অথবা ৫ টাকা যেটি বেশি হবে সে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর টাকা উঠানোর সময় উত্তোলনকৃত টাকার ২ শতাংশ অথবা ১০ টাকা অথবা যেটি বেশি হবে সে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে সিটিসেল ও বাংলালিংকের যেকোনো রেজিস্ট্রেশন পয়েন্ট থেকে মোবাইল অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যয় করতে হয় ১০০ টাকা।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিং
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড পরীক্ষামূলকভাবে ২০টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে শাখাহীন ব্যাংকিংয়ের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করবে। গ্রামের মানুষ কাছের ইউআইএসসি থেকে অ্যাকাউন্ট খোলা, নাগরিক সেবার বিল প্রদান, রেমিট্যান্স গ্রহণ, টাকা জমা দেয়া এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন। ইতিমধ্যে দেশে চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়ার কথা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ধন্যবাদ কষ্ট করে মন্তব্য করার জন্য।
বাংলাদেশ এইবার ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে…
এই মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে অনেকের ই ভাল ধারণা নেই । আমি নিজেও এই পোস্ট থেকে অনেক কিছু নতুন জানলাম । ধন্যবাদ নাজমুল হোসেন ভাই ।
টেকনোলজি অনেক আপডেট হরছে. ধন্যবাদ আপনাকে.