প্রযুক্তির এ যুগে এখন মানুষ ইন্টারনেট ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না। ইন্টারনেট জগতে রয়েছে ব্যাপক ও বিস্তৃত বিভিন্ন বিষয়ের আয়োজন। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইউনিকোড। এটি ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে আদি শব্দ হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন শব্দ হিসেবেই পরিচিত।
ইউনিকোড কী
ইউনিকোড সম্পর্কে জানতে হলে কম্পিউটারের অক্ষর বিন্যাসের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে আগে। আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী কম্পিউটার, এটি কোনো ভাষা, অক্ষর বা বর্ণমালা কিছুই বোঝে না। বোঝে শুধু সংখ্যা। কম্পিউটারে প্রতিটি অক্ষরের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যা বরাদ্দ থাকে। কম্পিউটারে যদি লেখা দেখতে চাই তবে তার জন্য ফন্ট প্রয়োজন হয়। ফন্টের কাজ হলো সংখ্যাকে ছবির মতো করে দেখানো। ফন্ট ফাইলে প্রতিটি সংখ্যার জন্য একটি করে অক্ষরের ছবি ম্যাপিং করা থাকে। সাধারণত যেসব অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তার বেশির ভাগই ইংরেজি ভাষায় থাকে। সে জন্য ইংরেজি ভাষায় ফন্ট পাওয়া বা কম্পিউটারে ইংরেজির ব্যবহার খুবই সহজ। ঝামেলার শুরু তখনই হয়, যখন কম্পিউটারে অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করতে যাবেন। আর এ ঝামেলার সমাধানের জন্যই ইউনিকোডের আবির্ভাব। ইউনিকোডের কাজ হলো বিশ্বের সবগুলো ভাষাকেই কম্পিউটারের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। বিশ্বব্যাপী এ কাজটি করে যাচ্ছে ‘ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা।
ইউনিকোডের সদস্য
সম্প্রতি মাইক্রোসফট, অ্যাপল, আইবিএমসহ বিশ্বের নামী-দামি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিকোডের সাথে তাল মেলাতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা এ প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে ইউনিকোডের উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম এবং ব্রাউজারে ইউনিকোড সমর্থন করে।
বাংলায় ইউনিকোড
বাংলা ভাষায় ইউনিকোড আসে ২০০০ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে। এটি ছিল ইউনিকোড ৩.০ সংস্করণ। এরই মধ্যে আমাদের দেশের কিছু তরুণ প্রযুক্তিবিদ বিভিন্ন ধরনের বাংলা ইউনিকোড টাইপিং এডিটর, ফন্ট ইত্যাদি ডেভেলপ করে তথ্যপ্রযুক্তিতে ইউনিকোড প্রযুক্তির বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখছেন।
বাংলাদেশে ইউনিকোড
বর্তমানে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ। ইউনিকোড সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংগঠন ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে এর আগে বাংলাদেশ সহকারী সদস্য হিসেবে ছিল। এখন বাংলা ভাষায় কম্পিউটারের ইউনিকোড প্রমিতকরণে এবং কম্পিউটার লিপিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, সংযোজন করার ক্ষেত্রে ভোটাধিকার লাভ করল। এর আগে বাংলা ভাষার জন্য ইউনিকোডের ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার শুধু ভোট দিতে পারত। এবার এ তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেতৃত্বে সরকারি অফিসগুলোতে বর্তমানে ইউনিকোডে বাংলা লিখন চালু হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রস্তুত করা নিকস লিপি এখন বিভিন্ন দফতরে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউনিকোডের প্রয়োজনীয়তা
ইউনিকোড ছাড়াও কম্পিউটারে বাংলা লেখা বা পড়া সম্ভব। তবে এ পদ্ধতিটি সার্বজনীন নয়। এক সফটওয়্যারে টাইপ করা বাংলা অন্য কোনো সফটওয়্যারে সম্পাদনা করা যায় না। কিন্তু ইউনিকোডে লেখা হলে তা কম্পিউটারে যেকোনো ইউনিকোড ফন্ট ইনস্টল করা থাকলেই পড়া যায়। এ ছাড়া ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ইউনিকোডের জুড়ি নেই। বর্তমানে ইন্টারনেটে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও ইউনিকোডভিত্তিক তথ্যসমৃদ্ধ বিভিন্ন সাইট গড়ে উঠেছে। আর এসব সাইট থেকে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় তথ্য খুঁজে বের করার কাজটি ইউনিকোড না থাকলে সম্ভব নয়। বর্তমানে কিছু পত্রিকার সাইট ছাড়া ইন্টারনেটের জনপ্রিয় সাইটগুলোর বেশির ভাগই ইউনিকোডভিত্তিক। এ ছাড়াও সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এর মাধ্যমে খুব সহজে বাংলায় ই-মেইল আদান-প্রদান সম্ভব।
ভাই ধন্যবাদ। ইউনিকোড সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম।
এটি জানার অনেক ইচ্ছা ছিল আজ আপনার কল্যাণে জানতে পারলাম আপনার পোস্টটি দারুন হয়েছে । ধন্যবাদ