পর্ব ১: ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি – পর্ব ১ (সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা)
পর্ব ২: ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টার নিয়ে আলোচনা )
আচ্ছা উপরের জিনিসগুলার বাংলা মানে হইল বিভব বিভাজক আর প্রবাহ বিভাজক। কাজ বুঝতেই পারতেছেন, কোন লাইনের ভোল্টেজ অথবা কারেন্টকে কেটে কুটে ভাগ করে ফেলা।
কি নাম শুইন্যা কি মনে হইতেছে এডভান্সড জিনিস? অবশ্য বলতে পারেন। তবে জিনিস খুবই সোজা। আসলে নতুন কিছু না, আগের টিউটোরিয়াল এর জিনিসগুলাই। হে হে, ভাবতেছেন মজা করছি?
না রে ভাই সত্যই। আসলে রেজিস্টারের কোন সিরিজ কম্বিনেশন দিয়ে ভোল্টেজ ডিভাইড করা যায় আর প্যারালাল কম্বিনেশন দিয়ে কারেন্ট ডিভাইড করা যায়। এই বার বুঝলেন তো?
কিভাবে এইটা করা যায়, তা বুঝতে হলে আগে কিছু জিনিস জানতে হবে।
১। নডটঃ কোন সার্কিটের বিভিন্ন পার্টস এর মধ্যকার সংযোগ কে নোড বলে। কোনো নোড এ সর্বনিম্ন ২ বা ততোধিক পার্টস এর সংযোগ থাকতে পারে। নোড মানে সংযোগ বিন্দু।
২। ব্রাঞ্চঃ কোন সার্কিটের যেকোন ২ টা নোডের মাঝে সংযুক্ত একটি যন্ত্রাংশ বা একাধিক যন্ত্রাংশের সিরিজ কম্বিনেশনকে ব্রাঞ্চ বলে।
এখানে কিন্তু ভাই একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। ২ টা নোডের ভিতর এক বা একাধিক ব্রাঞ্চ থাকতে পারে। কিন্তু ২ বা ততোধিক ব্রাঞ্চের ভিতর কিন্তু ১ টাই নোড থাকবে। বেশি হইতে পারবেনা। তাই সার্কিটে উল্টা পালটা কইরেন না আবার। নিচের ছবিটা সুন্দর করিয়া দেখেন। বুঝে যাবেন।
এইবার খুব দরকারি জিনিস। এইটা ভুললে কিন্তু সার্কিট শিখা আপনার কর্ম না।
১। সিরিজ কানেকশনে সবগুলা পার্টসের ভিতর দিয়ে বা ব্রাঞ্চের ভিতর দিয়ে সমান কারেন্ট যাবে।
কারন, এখানে যেহেতু রাস্তার কোন শাখা প্রশাখা তৈরি হয়নি তাই সবগুলা ইলেকট্রন একসাথেই যাবে।
২। প্যারালাল কানেকশনে কোন নোডে সবগুলা পার্টসের সংযুক্ত প্রান্তের ভোল্টেজ সমান হবে।
কারন, একটা নোড মানে একটা ইলেকট্রিক্যাল বিন্দু। আর সংযোগ তারের রোধ খুবই নগণ্য তাই এইখানে আসলে শক্তির কোন অপচয় হচ্ছেনা তাই ভোল্টেজ সমান থাকব।
এবার একটু ওহমের সূত্র। (বিভব = প্রবাহ × রোধ)
এটা এবার বিশেষ কাজে লাগবে। সেইটা হল কোন রোধের ভিতর বিভব পতন বের করার জন্য। কি বিভব পতন নাম শুনেন নাই?? নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। আমি আছি কি জন্যে?
ঘটনা হচ্ছে যে, কোন রোধের ভিতর দিয়ে কারেন্ট চললে, ওর ভিতরে কিছু ভোল্টেজ হারায় যায়। কারন কারেন্টের প্রবাহ ঘটাতে কিন্তু কিছু শক্তি ব্যয় হয়ে যাবে। কোন কাজ তো আর শক্তি ছাড়া আজাইরা হয়না। তাইনা??
আর ভোল্টেজ তো শক্তিই নাকি। এইটাকেই বলে বিভব পতন।
যার জন্যেই কারেন্ট চলাকালে, কোন রোধের ২ প্রান্তের ভোল্টেজ আর এক থাকবনা। একটা পার্থক্য তৈরি হবেই। সেইটা ওহমের সূত্র থেইক্যাই বের করা যাইব। ঠিক এই সিস্টেমেই ভোল্টেজ ডিভাইডার বানানো হয়। চিত্র দেখেনঃ
বামেরটা হইল ব্যাটারি। এর এক প্রান্তের ভোল্টেজ v , আরেক প্রান্তের ০ , তাহলে পার্থক্যও হইল v । R1, R2 রেজিস্টার ২ টা সিরিজে লাগানো হয়েছে। তাইলে মোট রেজিস্ট্যান্স R1+R2। এদের ভিতর দিয়া কারেন্ট যাচ্ছে,
I= v/(R1+R2)
ধরি R1, R2 এর সংযোগ নোড এর ভোল্টেজ v1। এর মান বাইর করতে হইব।
প্রথমে, R1 এর ভিতর বিভব পতন দেখি। এইডা হচ্ছে, v-v1 = I*R1
আর, R2 এর ভিতর বিভব পতন হচ্ছে, (I*R2) আর এইটাই হইল v1 ।
v1 = (I*R2)………………………………………(১)
একটু অংক করতে হবে, ২ বিভব পতনকে যোগ করেন এবার, তাইলে হচ্ছে,
(v-v1+v1) = v = (I*R1) + (I*R2) = I*(R1+R2)……………………(২)
দেখছেন কি, টোটাল টা আবার ব্যাটারির ভোল্টেজ ফিরা আসছে??
(১) আর (২) নং সূত্র হইতে এখন আমরা পাই, v1/v = (I*R2) / I*(R1+R2)
বা, V1/V = R2/R
বা, V1 = V *(R2/R)…………………..(৩)
এত কাহিনী কেনো করলাম?? কারন সবসময় তো কারেন্ট মাপার উপায় নাও থাকতে পারে। বেশিরভাগ সময়ই থাকেনা। তখন (৩) নং দিয়েই ডাইরেক্ট কাজ করা যায়।
তাইলে ঘটনা কি দাঁড়াল, সিরিজ কানেকশনে একই কারেন্ট যায় বলে, প্রত্যেক রেজিস্টারের ২ মাথায় নিজ নিজ মান অনুযায়ী বিভব পতন হইতেছে। এইটাকে ‘ভোল্টেজ ড্রপ’ ও বলে। তখন আমরা প্রত্যেক রেজিস্টারের প্রান্ত থেকেই বিভিন্ন ভোল্টেজ পাইতে পারি। কি একদম সোজা না?
অংকঃ উপরের ছবিতে ব্যাটারির ভোল্টেজ ১০ ভোল্ট , R1=১কিলো ওহম, R2 = ৪ কিলো ওহম ধরেন। এইবার v1 বাইর করেন। মন্তব্যের ঘরে উত্তর কত পেলেন লেখবেন। দেখুন ঠিক আছে কিনা। এটা হোম ওয়ার্ক।
এখন কারেন্ট ডিভাইডারে আসেন। এটা কিছুইনা, জাস্ট প্যারালাল সার্কিট। নিচে দেখেনঃ
এখানে R1, R2 প্যারালাল করা আছে। এক মাথায় ভোল্টেজ v আরেক মাথায় ০। ভোল্টেজ পার্থক্যও v । এখন মোট রেজিস্ট্যান্স,
Req= 1 / {(1/R1) + (1/R2)}= (R1*R2) / (R1+R2)
কিন্তু, V = I * {(R1*R2) / (R1+R2)}
সুতরাং, R1এর ভিতর এর কারেন্ট I1 = V/R1 = I*R1*R2/{(R1+R2)*R1}
=(I*R2)/(R1+R2)
একইভাবে, R2 এর ভিতরের কারেন্ট I2 = V/R2 = I*R1*R2/{(R1+R2)*R2}
=(I*R1)/(R1+R2)
এইবার I1 আর I2 যোগ করেন, নিশ্চিত রুপে মোট কারেন্ট I পাবেন।
তাইলে ঘটনা দাঁড়াল যে, সমান বিভব পার্থক্যের ফলে এবং ২ টা আলাদা পথ পেয়ে যাওয়ায়, প্রত্যেক রেজিস্টারের ভিতর দিয়ে মোট কারেন্ট ভাগ হয়ে গেল।
অংকঃ উপরের ছবিতে ব্যাটারির ভোল্টেজ ২০ ভোল্ট , R1=২কিলো ওহম, R2 = ১ কিলো ওহম ধরেন। এইবার I1 আর I2 বাইর করেন। মন্তব্যের ঘরে উত্তর কত পেলেন অবশ্যই লেখবেন। এটাও হোম ওয়ার্ক।
আপনারা কিন্তু খুউউউব ফাঁকি মারেন। আগের কোন পর্বের কোন কাজই কেউই করেন নি। এইভাবে চললে তো মহা সব্বনাশ। এরপর থেকে হোম ওয়ার্ক না করলে কিন্তু এক্কেবারে দেশি বেতের ব্যাবস্থা রাখব।
ফাইনালি একটা জিনিস না বললেই না। এতক্ষন যা পড়লাম তা ব্যবহার হয় কিসে?
শুনেন তাহলে, ভোল্টেজ ডিভাইডার বিভিন্ন সার্কিটে ভোল্টেজ বা সিগন্যাল এর মান বদলাতে কাজে লাগান হয়। আপনের রেডিওর ভলিউম কমান যেটা দিয়া সেটাও এই জিনিস। ভিতরে থাকে কার্বনের রিঙের মত রোধ। বাইরে আপনি একটা দণ্ড ঘুরান, ওইটা ভিতরে কার্বনের সাথে স্লাইডিং কানেকশন করা থাকে। ফলে বিভিন্ন পজিশনের জন্যে R1, R2 পরিবর্তন হয়, আর আপনি বিভিন্ন মানের সিগন্যাল পান। কারেন্ট ডিভাইডার বাজারে দেখিনি। এই সংক্রান্ত সুত্রগুলা সাধারনতঃ কোন প্যারালাল সার্কিটের বিভিন্ন লোড বা রোধ এর মধ্যে কে কত পাওয়ার বা শক্তি নিচ্ছে তার হিসাব করার জন্য কাজে লাগে। এগুলা নিয়া পরে বলব।
লেখতে লেখতে, হাত লেগে গিয়েছে। টিউটোরিয়াল দেয়া বহুত কষ্টের কাজ। তবে আপনাদের উপকার হলেই আমি খুশি। কিন্তু আসলে বেকার খাটতেসি কিনা বুঝতেসিনা। ফিডব্যাক নাই বললেই চলে।
_______________________________________
awesome tune…………….!!!!
ধন্যবাদ freak ভাই
Thanx for post
ওয়েলকাম