সৌদি আরবে চার বছর ধরে আছে গফুর মোল্লা ।নিজেকে অর্থের গোলাম ভাবে সে ।সৌদি আরবের চেয়ে বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র প্রমান করতে নানান যুক্তি উপস্থাপন করে ।সৌদিরা তো হেসে লুটি পুঁটী খাই ।আমরা প্রবাসীরা না হেসে পারিনা ।তবে বাংলাদেশে যদি সে এমন যুক্তি উপস্থাপন করে তার পিঠে যে ভূতে কিল মারবে তা নিশ্চিত ।আমি অনুবাদ করছি ?
শিশা বা হুকা ,খেজুর ও গাওয়া নিয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধায় আনন্দ আসর বসে সৌদি আরবের প্রায় সব জাইগায় ।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাই সৌদি রা যত আনন্দ করে এতটা আনন্দ ঈদ এর রাতেও করে বলে মনে হয়নি বাংলাদেশের মত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাই আনন্দ আসরে আলী নামের এক সৌদি বলে ফেলল বাংলাদেশ মিসকিন (গরীব) ।সকল বাংলাদেশি হাঁ মত দিল ।কিন্তু গফুর মোল্লা বলে ফেলল সৌদি বাংলাদেশের চেয়ে গরীব ।
আলী – কি ভাবে প্রমান কর ?
গফুর মোল্লা- বিদেশী পন্য আমদানি না করেও বাংলাদেশ চলতে পারবে ।বাংলাদেশের আইন মানবতা বিরোধী নয় ।বাংলাদেশের মানুষ একে অন্যকে বিশ্বাস করে ।
আলী – আর…।
গফুর মোল্লা- সৌদি আরবে দুই ঈদ ও স্বাধীনতা দিবস ২৩ এ সেপ্টেম্বর ছাড়া কোন সরকারী ছুটি নেয় ।বাংলাদেশ সকল ধর্মের মানুষের দেশ ।তবু ইসলাম ধর্মীয় ছুটি যে কত গুলো সুনলে তোমাদের কাপড় খারাপ হয়ে যাবে ।নবীর যদি জন্ম হত বাংলাদেশে তবে ১২ মাসের ২৪ মাস ইসলাম ধর্মীয় ছুটি থাকত ।অন্যান্য ধর্মের ১ মাস মিলে ২৫ মাস ছুটি হত ।
আলী –তাই নাকি ?
গফুর মোল্লা- তোমাদের রাজার এই গুনটি ভাল রমজান মাসে ৬ ঘণ্টা ব্যসিক ডিউটি তা ছাড়া আর কোন গুন নেই ।
আলী –সব আল্লার ইচ্ছে আজ একটি ভাল বললে পরে আরও একটি ভাল বলবে এভাবে সৌদি হুকুমা সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে ?
গফুর মোল্লা- মনে মনে বলে সৌদি হুকুমা আমার ভাল লাগে ।কিন্তু বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি আমি কি ভাবে বাংলাদেশের হুকুমা খারাপ বলব ? আমার ও মন চাই বাংলাদেশে এমন আইন হোক চুরি ,ছিন্তাই,চাঁদাবাজদের হাত কাটা হবে ,যারা এসিড ছুঁড়ে তাদের এসিডে গোসল করানো হবে, যারা অন্যের দোকান পাট ,গাড়ি ভাঙচুর করে তাদের মেরুদণ্ড পুলিশের ডাণ্ডাই গুড়িয়ে দেওয়া হবে। আর যারা ইভতিজিং করে তাদের কি ……।
গফুর মোল্লার আর কিছু বলার নেয় ধরা খেয়েছে ভেবে ইদ্রিস বাউল গান ধরেছে ‘আমার দয়াল বাবা শিশা খাবা আরাম করে খাও ’ পানির বোতল ,দুটি কাঠের টুকরো ,লোহার ও প্লাস্টিকের তৈরি বাঁশি, রড দিয়ে তৈরি টুনটুনি ইত্যাদি নিজেদের তৈরি যন্ত্র সঙ্গিতের তালে সুমধুর সুর মিশে যাই দিগন্তের শেষ সীমানাই ।অর্থ না বোঝেই সৌদি রা হুট হাট শব্দ করে হাততালি দেয় হেসে হেসে লুটি পুঁটি খাই যেন বঙ্গোপসাগর ও লহিতসাগর এক হয়ে ভাসচ্ছে সুরের ভেলাই ।
আমার ভাবতে অবাক লাগে পৃথিবীর সকল পশুপাখির ভাষা এক কিন্তু মানুষ এক আজব জীব ১০০ কিলো পর পর ভাষার পরিবর্তন হতে থাকে ।ভাষার ও কি লেজ আছে হয়ত বা আছে নয়ত বা নেই ?
এর মধ্যে রাত ১ টা বেজেছে ।আনন্দ আসর শেষের পথে শিশা ও মৃত প্রায় কিন্তু একটু একটু মাথা ব্যথা অনুভব করছে গফুর মোল্লা মনে একটা দাগ কাটে তার শিশাতে কি হাশিস বা গাঞ্জা মেশানো ছিল ।গাঞ্জার ব্যপারে এ দেশের আইন খুবি কঠিন ,তবু কিছু কিছু আইন এরা ভাঙতে এরা পছন্দ করে ।সকলের কাছে বিদায় নিয়ে শোবার ঘর এর দিকে পা বাড়াই গফুর মোল্লা ।
একটু শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাই তাকে মনে হয় যেন বাংলাদেশ থেকে ভেষে আসা এ বাতাস অনুভন করে সে বাংলা মা প্রবাসী সন্তানদের জন্য কাঁদছে ।
দেখে সে তাস এর আসর চলছে হয়তবা আজ অনেক টাকার হার জিত হবে ?আজ বলার ক্ষমতা হারিয়েছে এত বেশি খেলিস না রে তোরা খেলার মজা সাজা তে পরিনত হবে ।মনে পড়ে তার এই তাস খেলার মজা উপভোগ করতে গিয়ে জন্মদাত্রী মা এর অসুখ বেড়েছে শুনেও না গিয়ে তাস খেলায় মত্ত ছিল গফুর মোল্লা আধা ঘণ্টা পরে সে চমকে উঠে মা এর মৃত্যু সংবাদ শুনে ।সেই থেকে তাকে আর গো মোল্লা বলে বলে ডাকেনি তার মা পাড়া প্রতিবেশীরা ও গামলা বলে ডাকেনা আর ।
বাথরুম এর পোর্টেবল থেকে শব্দ আসে কংগ্রেস ,ভিজিপি নয় আমি হব ইন্ডিয়া র প্রধান মন্ত্রী রেশন কার্ড দিয়ে দারু বা দেশী মদ যেন সকলে পায় আমি কারিম সে ব্যবস্থা করব ,আমি রুমে প্রসাব ফিরেছি বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিল আমি রুমে আগুন লাগিয়ে দিব ।ওদের ইন্ডিয়া যাবার পথ বন্ধ করে দিব ।আমাকে মাতাল বলে যারা তারায় মাতাল ।
গফুর মোল্লার বুঝতে বাকি নেয় কারিমের পেটে কিছু পরেছে ।এখনে ইন্ডিয়ান ,শ্রিলঙ্কান, ফিলিপিনো রা আঙ্গুর ইস্ট আর কি কি দিয়ে যেন মদ বানিয়ে ফেলে ।পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে ।পাকিস্থান আফগানিস্থানীরা আফিম নিয়ে ধরা পড়ে বেশি ।
এত রাতেও বেশ কএকজন কে মোবাইল এ কথা বলতে দেখে সে ।প্রেমিকার সাথে যারা কথা বলে তাদের আলাদা করার সহজ উপায় হল ওদের পছন্দের জাইগা হল ডাস্টবিন ,কাঁচড়া পানির ট্যাঙ্ক ,দুই রুমের গ্যাপ ইত্যাদি।
ফিলিপিনোদের আসর শেষ হয়নি তাদের সাথে বসে একটু কাবাব খেল গফুর মোল্লা তার পর প্যত্রিশু কে অনুরধ করে সাঁচ লাভ উইথ বেস্ট গানটি গায়তে কিন্তু সে রেল লাইনের বস্তিতে গানটি গাইল আগে এদের মুখে বাংলা গান শুনলে হাসি পেত কিন্তু এখন পায়না কয়েকটি শব্দ ছাড়া বেশ সুন্দর উচ্চারণ করছে তারা ।
গফুর মোল্লা আর ঘুমতে গেলনা বক্সিং রিং এর দিকে গেল সেখানেও কয়েক জন তার দৃষ্টি গোচর হয় ।ভলি বল ,বাস্কেট বল খেলছে অনেকে ওদের সাথে যোগ দিয়েছে কিছু বাংলাদেশী গফুর মোল্লার খুব ভাল লাগছে ফুতবল এর মাঠটি রয়েছে একা কয়েক ঘণ্টা আগেও এখানে একটি ফুটবল কে গোল বানানোর চেষ্টাই মত্ত হয়েছিল অনেকে ক্রিকেট এর জন্য ও মাঠ বানানোর কাজ চলছে । গফুর মোল্লা মনে মনে ভাবে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ নেই অথচ বিদেশে কম্পানি গুলো সাধারন শ্রমিকদের বিনোদন এর জন্য মাঠ বানাচ্ছে ।একটা বড় হল রুম বানিয়েছে যেখানে প্রজেক্টর রয়েছে ।
খুব ইচ্ছে করছে গফুর মোল্লার ক্যাম্প এর বাইরে যেতে মরুভুমির বুকে পদচারন করতে কিন্তু গার্ড বাইরে যেতে দিলনা । বলল রাতে মরুভুমি মটেও নিরাপদ নয় ।সাপ সহ অনেক কিট পতঙ্গ আহারের সন্ধানে বের হয় ।
গফুর মোল্লা তার রুমের দিকে পা বাড়াই নিজের ছায়া ছাড়া কারো সাথে দেখা হল না তার ।রুমে প্রবেশ করে চুপ করে শুয়ে পরল ।
অনেক সুন্দর পোষ্ট! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।